এই দেশে আদিবাসীরা সবচে উপেক্ষিত সেইটা নতুন কইরা বলার কিছু নাই। ১৯৫০ থাইকাই আদিবাসীদেরকে নিজ ভূমি থাইকা উচ্ছেদ করা হইতাছে বারংবার কখনো বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে, কখনো বনবিভাগের উছিলায়, কখনো পর্যটন শিল্প কিংবা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট এর উছিলায়।
কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কখনোই করা হয় নাই। জিয়াউর রহমান পাহাড়কে একসেসিবল করার লাইগা, পাহাড়ির লগে বাঙালীর সুসম্পর্ক ঘটানোর লাইগা সাড়ে চাইর লাখ বাঙালী সেটলার ঢুকাইছে পাহাড়ে।
পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন, সামাজিক ব্যবস্থাপনা আলাদা, কিন্তু যে সরকার ই আসুক না কেন ক্ষমতায় আদিবাসীদেরকে বাঙালি পারস্পেক্টিভ থাইকা মাপছে,তারা কেউ ই পাহাড়ী মানুষকে তাদের পারস্পেক্টিভ থাইকা দেখতে চায় নাই।
আমরা একের পর এক অজুহাতে তাদেরকে উচ্ছেদ কইরা গেছি। কাপ্তাই লেক থাইকা ১ লক্ষ মানুষ কে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। আদিবাসীদের ৬০ ভাগ জমি পানির নিচে চইলা গেছিল, কিন্তু তাদের পুনর্বাসন হয়নাই।
নীলগিরিতে ৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেখান থেকে উচ্ছেদ হইছে ২০০ ম্রো ও মারমা পরিবার।
থানছির জীবননগর সেপ্রু পাড়া ৬০০ একর অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ হইছে ১২৯ ম্রো পরিবার। সাজেক রুইলুই পাড়ায় ৫ একর অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ হইছে ৬০ পরিবার।
এছাড়াও ক্রাউডং (ডিমপাহাড়) ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ হয়েছে ২০২ ম্রো পরিবার। নীলাচলের ২০ একর থেকে উচ্ছেদ হয়েছে ১০০ ত্রিপুরা,তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা পরিবার।
এত অসংখ্য মানুষকে উচ্ছেদ করবার পরেও তাদের পুনর্বাসনের কিন্তু কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। বরং পরিবেশের দোহাই দিয়ে এই প্রকৃতির মানুষগুলোকে, যারা হাজার বছর ধরে এই বন পাহাড়ের সাথে সহাবস্থান কইরা আসতেছে তাদেরকে বিতাড়িত কইরা রাষ্ট্রীয় জলপাই এর মাধ্যমে সেসব জায়গাকে ট্যুরিস্ট স্পট বানানো হয়েছে, বাঙালি ব্যবসায়ী দের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলন কইরা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হইছে।
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট এর নামে হাজার হাজার একর জমিকে কংক্রিট জঙ্গল বানানো হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত ট্যুরিস্ট এর মাধ্যমে প্লাস্টিক এ ভরে দেয়া হইছে সো কল্ড সংরক্ষিত বন ও নদী।
পাহাড়ে ট্যুরিজম নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রীয় জলপাই, আর তাদের ছত্রছায়ায় ঢাকা এবং চিটাগাং এ বসে থাকা কিছু টাকার কুমির সেইখানে রিসোর্ট হোটেল বানাইয়া কোটি কোটি টাকা কামাইতাছে। অথচ পাহাড়ে ট্যুরিজম হইতে পারতো আদিবাসীদের পুনর্বাসনের হাতিয়ার।
পাহাড়ের ট্যুরিজম কে লোকলাইজ করা হইল তবেই পাহাড়িদের উন্নতি হইত। কিন্তু আমরা তা করি নাই, এখন আমাদের আদিবাসীরা সাজেকের রাস্তার পাশে বাদাম, চা বেচে। আর সেটাকে আমরা পাহাড়ের উন্নতি বলি। পাহাড়ের মানুষ আগে দরিদ্র ছিল না, এখন দরিদ্র। এখন আদিবাসী দের মাঝে দারিদ্র ৭০ শতাংশ।
আমরা সাধারণ বাঙালি নাগরিক হিসেবে এই দায়ভার কখনো নিই নাই। আমরা প্রশ্ন করিনাই নিজ ভূমিতে আমাদের লক্ষ লক্ষ আদিবাসী কেন উদ্বাস্তু, নিজ রাষ্ট্রে কেন তারা রিফিউজি? খুব বেশিদিন আগের কথা না, দুহাজার ষোল সালে গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়া আগুন দিয়ে আমরা সাঁওতাল দের উদ্বাস্তু করি, হাজার হাজার বছর ধইরা যে মানুষেরা এই ভূমিতে বাস করছে তাদের কে আমরা ভূমিহীন বানাইয়া দিই। এবং কোনো বিচারও রাষ্ট্রের কাছে পায় না তারা!
আমি পাহাড়ের ট্যুরিজমের বিপক্ষে নই, আমি বিশ্বাস করি আমাদের পাহাড়ে সারা পৃথিবীর মানুষ ঘুরতে যাবে কিন্তু সেই ট্যুরিজমের দায়িত্ব দিতে হবে আমাদের পাহাড়িদের আমাদের আদিবাসী দের। ভূমিপুত্র সেই ভূমির দায়িত্ব নিলে পরে তবেই পাহাড় থাকবে সুরক্ষিত এবং এবং আমাদের পাহাড়ি মানুষদের উন্নয়ন ঘটবে। আমি রাষ্ট্রীয় জলপাই আর ঢাকায় বসে থাকা অর্থলোলুপ শকুন দের পেট ভরানোর ট্যুরিজম কে সাপোর্ট করিনা।
আমার ফেসবুকে অনেক মানুষ আছে যারা ট্যুরিজমের সাথে সম্পৃক্ত, আপনাদেরকে দেখি প্রায় ই আপনারা বড় বড় ট্যুরিস্ট টিম নিয়ে যান এইসমস্ত স্পটে, ইভেন্ট খোলেন, ডিজে ভাড়া করেন। আপনাদের কি বোধ আসেনা ? সামান্য পয়সার জন্য , সামান্য কিছু পয়সার জন্য! আপনারা কি আদতেই সেইসব পাহাড়ে দাঁড়াইয়া আনন্দ পান যেইখানে থাইকা হাজারো মানুষকে ভূমিহীন করা হইছে? নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় না বিশুদ্ধ বায়ুতেও?
লেখকঃ পিনাক পাণি
0 Comments