যেমন ধলিরছড়া, কালিছড়া, পানিরছড়া, বরইছড়া, বনিয়া ছড়া, ধওয়াপালং ছড়া, হাদরা ছড়া, ধালির ছড়া, বাহার ছড়া, হাদুর ছড়া, দোচারি ছড়া, মনিয়া ছড়া, হারবাং ছড়া, জুমছড়ি, দোছড়ি, জাংছড়ি, ফুলছড়ি, নাক্ষ্যংছড়ি, সোনাইছড়ি, হিমছড়ি, চেংছড়ি, নুনছড়ি, জয়ছড়ি, মিঠাছড়ি, করল্যাছড়ি, থিমছড়ি, নোনাছড়ি, পানছড়ি, কোয়াংছড়ি, ঘিলাতলী, কলাতলী, তুলাতলী, সিবাতলী, পাহাড়তলী, বেলতলী, জারইলতলী (জারুলতলী?), বাথতলী, শ্রীমুরা, ফকিরামুরা, চৌচুলা মুরা, করলিয়া (করল্যা?) মুরা, বালুখালী, বাঁকখালী, রাজাখালী, মনাখালী, উলটাখালী, ভারুয়াখালী, নাপিতখালী, ফাস্যাখালী, মহেশখালী, উমখালী, খনাখালী, নন্দাখালী, উখিয়ার ঘোনা, খেংচরঘোনা, কালুয়ারঘোনা, আসমারঘোনা, হাউরিঘোনা, থোলিয়াঘোনা, খেনচুর ঘোনা, লাফার ঘোনা, পানিস্যা ঘোনা, জিরানিখোলা, কাচিরখোলা, হরিতলা, মুরাপাড়া, আলিখখ্যং, হোয়াইখ্যং, জওয়ারিয়া নালা, মরিচ্যা (মারিশ্যা?), বেতবুনিয়া, কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, আছারবনিয়া, মেরং(মেরুং?)লোয়া, চাকমারকাটা ইত্যাদি।
সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো টেকনাফের দক্ষিণে সাগরপাড়ে ‘সাবরাং’ নামে একটা ইউনিয়ন রয়েছে যা একান্তই চাকমাদের ব্যবহৃত একটি মশলা গাছের নাম অনুসারে। এটা টেকনাফ তথা বাংলাদেশের
সর্বদক্ষিণ ইউনিয়ন সাবরাং (Lemon Basil) চাকমাদের রান্নায় নিত্য ব্যবহৃত একটি মশলা পাতা যা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে চাষ হয়। অথচ সমতলে এর ব্যবহার খুব একটা দেখিনি (অতি সম্প্রতি ঢাকায় সবজি বাজারে বেশ চড়া দামে একটু-আধটু বিক্রি হচ্ছে বলে আমি লক্ষ্য করেছি)।

বৃটিশরা অষ্টাদশ শতকে যখন ভারতবর্ষে রাজত্বের সূচনা করে তখন কোলকাতা ছিল একটা গ্রাম। ঢাকার ইতিহাসও খুব বেশি প্রাচীন নয়। কিন্তু ঐতিহাসিক রামু জনপদের উপর নির্মিত সংযুক্ত ডকুমেন্টারীর মতে রামু ঠাঁই পেয়েছে ১৮৫৮ বছর আগে গ্রীক ভুগোলবিদ টলেমীর ভুগোল গ্রন্থে।
চীনা পরিব্রাজক ফাহিয়েন এর ভ্রমণ-বৃত্তান্ত যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে মহামানব গৌতমবুদ্ধ হয়তো তাঁর জীবদ্দশায় স্বশরীরে এসেছিলেন এই রামু জনপদে অথবা তিনি না এলেও তাঁর মহাপরিনির্বাণের পরে এখানে আনা হয়েছিল তাঁর বক্ষাস্থির অংশবিশেষ।
গৌতমবুদ্ধের এই স্মৃতিকে ধারণ করার জন্য পরবর্তীতে মহান সম্রাট অশোক তাঁর ৮৪ হাজার ধাতুচৈত্যের একটি নির্মাণ করেছিলেন এখানে, যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। মহামানব বুদ্ধ ও সম্রাট অশোকের স্মৃতিবিজড়িত এমন স্বনামধন্য এক জনপদে চাকমারা রাজত্ব ও বসবাস করত ভাবতে নিজেকে নিঃসন্দেহে অনেক গৌরবান্বিত বোধ হয়। চাকমারা নিজেদের শাক্যবংশীয় হিসেবে দাবি করে।
প্রশ্ন জাগে শাক্যবংশীয় হিসেবে চাকমারাই কি তাহলে রামু জনপদে নিয়ে এসেছিল নিজেদের পরমাত্মীয় শাক্যমুনি গৌতমবুদ্ধের বক্ষাস্থির অংশবিশেষ? রামু জনপদে বসবাসকে ভিত্তি করে চাকমাদের ইতিহাস, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির উপর বেশ কিছু জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়া যেতে পারে, যা আমরা পরবর্তীতে আলাপ করবো।
0 Comments