মাদ্রিদে চাকুরিকালীন সময়ে গ্লোরিয়া লংবার্ডোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তিনি বিবাহের অনুমতি চেয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অাবেদন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তাঁর সে আবেদন অনুমোদন করার বদলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তল্পিতল্পাসহ দিল্লীতে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়। পরে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নির্দেশে তাঁর বদলী স্থগিত হয় এবং তাঁর অনুমতিতে তাঁদের বিবাহ সম্পাদন হয়। তাঁর ঔরসে দুই কণ্যা সন্তানের জন্ম হয়।
দীর্ঘ অনেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত (সরকারি সর্বোচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তা) হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের পর তিনি ১৯৯৩সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ইন্ডিয়ান এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (IAS) ও ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস (IFS) পরীক্ষায় তিনি যে রেকর্ড গড়েছিলেন ভারতের কোন সিডিউল ট্রাইব বা সিডিউল কাস্ট অদ্যাবধি সে রেকর্ড ভাঙতে পারেননি।
অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট খাগড়াছড়ির এই কৃতী সন্তানটি ছাত্রজীবনে “Why I best in India” বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতায় সমগ্র ভারতে ১ম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট হিসেবে কর্মজীবনে তার বিশাল সুপরিচিতি ছিল। লেখালেখিতে তিনি খুবই ভালো ছিলেন। Hare School’এ পড়াকালীন সময়ে তিনি ‘মনের ফসল’ নামে সাহিত্য পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। জীবনে তিনি অসংখ্য ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ও বর্তমান প্রেক্ষাপট, কাপ্তাই বাঁধের কারনে সৃষ্ট পাহাড়িদের সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী, নির্যাতিত-নিপীড়িত পাহাড়িদের শোষন ও বঞ্চনার ইতিহাস এবং তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন, চাকমা সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তি ও সমকালীন রাজনীতি এবং তৎসময়ে উপমহাদেশের ক্ষমতাধর শাসকদের চরিত্রের নেতিবাচক দিকসমূহ উপস্থাপনের মাধ্যমে ন্যারেটিভ স্টাইলে তার লেখা All That Glisters ও Time and Again উপন্যাসগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠকদের কাছে খুবই সমাদৃত হয়েছে।
বিরল তথ্য সম্বলিত তাঁর বইগুলি বর্তমানে অনেক লেখক ও গবেষক পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে লিখতে গিয়ে রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহার করছেন। অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা বইগুলিতে জন্মভূমির প্রতি তাঁর গভীর টান ও আত্মিক সম্পর্কের বিষয়টি বার বার গুরুত্বারোপ করেছেন।
১৯৪৭ সালের দেশবিভক্তিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও বেশি ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করে উক্ত কারনে শত সহস্র পরিবারের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে দুঃখের সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন এবং নিজের ক্ষেত্রেও অাজীবন এ সীমাহীন বেদনা বয়ে বেড়ানোর অাক্ষেপ প্রকাশ করেন।
বিদেশীনি বিয়ে করলেও জন্মভূমি ও শিকড়ের প্রতি তাঁর গভীর টান সবসময় অবিচল ছিল। তাইতো তিনি সবসময় আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রেখেছেন এবং সাধ্যানুযায়ী বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিতে কার্পন্য করেননি। তাছাড়া তাঁর লেখা বইগুলিতে চাকমা জাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে বিরল তথ্য সংযোজনের মাধ্যমে স্বাজাত্য সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধাবোধ পরিলক্ষিত হয়।
0 Comments